লোকটা দেখতে অবিকল সত্যজিৎ রায়। তেমনই দীর্ঘ গঠন, দাঁড়াবার ভঙ্গি, খাড়া নাক! তবে এ মুহুর্তে লোকজন ঠিক তাকে খেয়াল করছেনা, সবার মনোযোগ তার হাতে ধরা ছোট মেয়েটির দিকে। বয়স তিন-চার কিংবা আরো বেশী হতে পারে। অভাবের সাথে অপুস্টির যোগাযোগটা সরাসরি, আর অপুস্টির প্রভাবটা সরাসরি পড়ে সৌন্দর্যতে। এ মেয়েটি ঠিক কুৎসিত নয়, তবে ভালো খাবার দাবার পেলে ওকে হয়তো আরো ভালো দেখাতো। হারিয়েছে মেয়েটা, কিন্তু দিশেহারা ভাব বৃদ্ধের মুখে। সে তুলনায় মেয়েটা একদম নির্ভার। মাঝে মাঝে বৃদ্ধের হাত ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে এদিক ওদিক। ঘিরে থাকা দর্শনার্থীদের মাঝেও চাপা অস্বস্তি। কিছুক্ষণ পরেই আঁধার নামবে। এর মধ্যে যদি মেয়েটার বাবা-মাকে খুঁজে পাওয়া না যায়!
বৃদ্ধের বৈকালিক ভ্রমন লাটে উঠেছে। সময় নস্ট না করে তিনি বরং মা সূলভ কাউকে দেখলেই ছুটে যাচ্ছেন। আমিও সময় নস্ট না করে হাটতে থাকি। নিজের সমস্যাও কি কম? চাকরিটা যাই যাই করছে, কাল আবার মর্নিং ডিউটি, উঠতে হবে সকাল পাঁচটায়। আরেক রাউন্ড ঘুরে আসতেই দেখি মায়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। ক্রুদ্ধ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন বৃদ্ধ। বকাঝকা করেন কিনা- ভাবছেন। পাশের দাঁড়িয়ে মা’টা কিছুটা লজ্জিত ভঙ্গিতে। যাক, একটা সমস্যা তো মিটলো। এবার বাকিগুলো নিয়ে ভাবা যেতে পারে। চাকরীটা বোধহয় আর বাঁচানো যাবেনা। এদিকে আবার চলছে মাসের শেষ সপ্তাহ। পকেটে পড়ে আছে মোটে পাঁচশোটা টাকা।
শেষ রাউন্ড দিয়ে বের হবো, এমন সময় হঠাৎ কেন যেন থেমে যেতে হলো, চেয়ে দেখি সেই মা’টাই বসে আছে গাছের আড়ালে, পাশে একজন পুরুষ।
বসার ভঙ্গিটি বলছে স্বামী নয়, অন্য কিছু। মেয়েটাকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা। ভাগ্য ভালো বলতে হবে- সত্যজিৎ বাবুকেও দেখা যাচ্ছেনা আশেপাশে!
জাহান্নামে যাক, আমার কি! গজগজ করে গেট দিয়ে বের হতেই দেখি- মেয়েটা একা একা এগিয়ে যাচ্ছে রাস্তার দিকে।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।